উচ্চশিক্ষার জন্য কোন দেশ ভালো?
বর্তমানে বাহিরের দেশে উচ্চশিক্ষার প্রবণতা দিনে দিনে বেরেই চলছে। একটি তথ্য থেকে জানা যায় যে বাংলাদেশে থেকে ২০২৩ সালে আনুমানিক ৭৫০০০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী বাহিরের দেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে গেছে। যা বিগত বছরের তুলনায় প্রায় ৭.৮৩% বেশি। আপনিও যদি বাহিরের দেশে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে চান তাহলে আপনার মনেও প্রশ্ন জাগতে পারে কোন দেশ উচ্চ শিক্ষার জন্য উপযুক্ত? কোন দেশে সবচেয়ে বেশি ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষা অর্জন করেতে গেছে এবং কেন? জানতে হলে আমাদের এই সম্পূর্ণ ব্লগটি পরুন।
উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা
উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হল সঠিক তথ্যের অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থান। অনেকে চিন্তা করে যে বাহিরের দেশে উচ্চশিক্ষা মানেই অনেক টাকা। কিন্ত বিষয়টা এমন না। যারা বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পরার চিন্তা করছেন বা পড়াশোনা করছে তারা সেই টাকা দিয়ে খুব সহজে বাহিরের কোন ভাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে পারবে। এখন আপনি কোন দেশে পড়াশোনা করতে চান তা নির্ভর করবে আপনি কত টাকা খরচ করতে পারবেন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন দেশে উচ্চশিক্ষা করতে কত টাকে খরচ হয়।
জাপান
২০২৪ এ বিশ্বের প্রথম ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাপানের ২ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আপানর যদি কম বাজেট থাকে তাহলে জাপান আপনার জন্য একটি সেরা পছন্দ হতে পারে।উন্নত বিশ্বের তুলনায় জাপানের পড়াশোনার মান অনেক ভাল। জাপানে পড়াশোনা করার পর সেখানে চাকরির সুযোগ এবং স্থায়ী হতে পারবেন। এছাড়া আপনি চাইলেই অন্য যেকোনো দেশে চলে যেতে পারবেন। আপনি চাইলে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করতে পারবেন। যা দিয়ে আপনি অনায়েশে নিজেরে থাকা খাওয়া এবং পড়াশোনার খরচ বহন করতে পারবেন। জাপানে যদি আপনি বি.বি.এ করতে চান তাহলে আপনার খরচ করবে আনুমানিক ১০ থেকে ১১ লাখ টাকা প্রায় । আর যদি আপনি এম.বি.এ. করতে চান তাহলে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে।এটি পরিবর্তন হতে পারে বিষয় এবং সময় সাপেক্ষে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৭০০ জন শিক্ষার্থী জাপানে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে গেছে। নিচের গ্রাফে প্রকাশ করা হয়েছে বিগত ১০ বছরে কত জন শিক্ষার্থী জাপানে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে গেছে।
For an Inquiry about Japan: (880) 1930-350350
দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়া হতে পারে আপনার বাজেটের মধ্যে পছন্দের একটি দেশ।২০২৪ এ বিশ্বের প্রথম ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া ৩ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।বিশ্বব্যাপী একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব, আধুনিক অবকাঠামো এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।দক্ষিণ কোরিয়াতে স্টুডেন্ট দের পড়াশুনার পাশাপাশি পার্ট টাইম কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয় একাডেমিক সেমিস্টারে প্রতি সপ্তাহে 20 ঘন্টা পর্যন্ত এবং সেমিস্টার বিরতির সময় ফুলটাইম। দক্ষিণ কোরিয়াতে যদি আপনি বি.বি.এ করতে চান তাহলে আপনার খরচ করবে আনুমানিক ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা প্রায় ।আর যদি আপনি এম.বি.এ. করতে চান তাহলে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। তবে এটি পরিবর্তন হতে পারে আপনার ইউনিভার্সিটি এবং সাবজেক্ট এর উপর ডিপেন্ড করে।২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০০০ জন শিক্ষার্থী দক্ষিণ কোরিয়াতে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে গেছে। নিচের গ্রাফে প্রকাশ করা হয়েছে বিগত ১০ বছরে কত জন শিক্ষার্থী দক্ষিণ কোরিয়াতে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে গেছে। Scholarship ছাড়া ব্যাচেলর শেষ করতে 40–50 লক্ষ লাগে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। World University Rankings 2024 অনুযায়ী, বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৫টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত।পড়াশুনার মান ,গবেষণা সুবিধা,ভাল ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ জন্য মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক ছাত্রদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।Institute of International Education এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক ছাত্র পড়াশোনা করছিলেন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশের ছাত্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাচেলর অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) এর জন্য অধ্যয়নের মোট খরচ সাধারণত চার বছরের প্রোগ্রামের জন্য প্রায় 48,06,000 থেকে 30036000 পর্যন্ত হয়। আর যদি আপনি এম.বি.এ. করতে চান তাহলে প্রায় দুই বছরের প্রোগ্রামের জন্য2,402,850 থেকে 18,021,382 এর বেশি।এটি পরিবর্তন হতে পারে বিষয় এবং সময় সাপেক্ষে। কিন্ত বেসরকারি থেকে সরকারি ভাবে খর তুলনামূলক ভাবে কম লাগে।2023 সালে, বাংলাদেশ থেকে আনুমানিক ১১০০০ থেকে১২,000 শিক্ষার্থী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছে বলে অনুমান করা হয়।
যুক্তরাজ্য
যুক্তরাজ্য উচ্চশিক্ষার জন্য আরেকটি চমৎকার স্থান। অক্সফোর্ড এবং ক্যামব্রিজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে এটি সারা বিশ্বে পরিচিত। উচ্চ-মানের শিক্ষা,বিভিন্ন কোর্সের বিকল্প,সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা,বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি,গবেষণার সুযোগ,সাপোর্ট সার্ভিস এর মতো এমন আরো সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় গুলো।২০২৪ এ বিশ্বের প্রথম ১০০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ২৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। Higher Education Statistics Agency (HESA) রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক ছাত্রের সংখ্যা প্রায় ৬৭০,০০০। ২০২৩ সালে, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৮০০০ থেকে ৯,000 শিক্ষার্থী তাদের পড়াশোনার জন্য যুক্তরাজ্যে গেছে বলে অনুমান করা হয়েছিল।যুক্তরাজ্যে যদি আপনি বি.বি.এ করতে চান তাহলে আপনার খরচ হবে আনুমানিক 9,298,938 থেকে 18,597,876 প্রায় তিন বছরের প্রোগ্রামের জন্য । আর যদি আপনি এম.বি.এ. করতে চান তাহলে প্রায় প্রতি বছর 1,859,787 থেকে 6,509,256 খরচ হতে পারে।বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে উল্লেখযোগ্যভাবে খরচ পরিবর্তিত হতে পারে।
কানাডা
কানাডা উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়, বিশেষ করে বাংলাদেশের ছাত্রদের মধ্যে।Canadian Bureau for International Education (CBIE) এর ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, কানাডায় ৬০০,০০০ এরও বেশি আন্তর্জাতিক ছাত্র পড়াশোনা করছে। কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন স্কলারশিপ রয়েছে এবং শিক্ষার খরচও যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম। World University Rankings 2024 অনুযায়ী, বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩ টি কানাডায় অবস্থিত।ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, 2023 সালে বাংলাদেশ থেকে 5,835 জন শিক্ষার্থী কানাডায় পড়তে গিয়েছিল।এটি বিগত বছরগুলির তুলনায় একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির এবং কানাডা উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। যদি আপনি বি.বি.এ করতে চান তাহলে আপনার খরচ হবে আনুমানিক 3,363,991.32 – 6,607,840.08 প্রতিবছর।আর যদি আপনি এম.বি.এ. করতে চান তাহলে খরচ হবে প্রায় 6,607,840.08 – 12,014,254.70 প্রতিবছর।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া উচ্চশিক্ষার জন্য আকর্ষণীয় একটি দেশ।Study in Australia রিপোর্ট অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় ৬০০,০০০ আন্তর্জাতিক ছাত্র রয়েছে, যারা বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে অনেক ছাত্র এখানে পড়াশোনা করতে আসছেন। আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জন্য প্রচুর স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার সুযোগ অত্যন্ত ভালো।World University Rankings 2024 অনুযায়ী, বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৬টি অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থিত। যদি আপনি বি.বি.এ করতে চান তাহলে আপনার খরচ হবে আনুমানিক 4,204,989.14 – 7,208,552.82 প্রতিবছর।আর যদি আপনি এম.বি.এ. করতে চান তাহলে খরচ হবে প্রায় 6,607,840.08 – 12,014,254.70 প্রতিবছর
জার্মানি
জার্মানি ইউরোপের একটি অনন্য দেশ যেখানে উচ্চশিক্ষার খরচ খুবই কম এবং বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি নেই। German Academic Exchange Service (DAAD) অনুযায়ী, ২০২৩ সালে জার্মানিতে ৪০০,০০০ এরও বেশি আন্তর্জাতিক ছাত্র ভর্তি হয়েছেন। এদেশে ছাত্রদের জন্য ইংরেজিতে বিভিন্ন কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে এবং বাংলাদেশের ছাত্রদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।পড়াশোনার পাশাপাশি পার্ট টাইম জব করতে পারবেন,ড়াশোনা করার পর সেখানে চাকরির সুযোগ এবং স্থায়ী হতে পারবেন।World University Rankings 2024 অনুযায়ী, বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮টি জার্মানিতে অবস্থিত।যদি আপনি বি.বি.এ করতে চান তাহলে আপনার খরচ হবে আনুমানিক1,288,600 – 3,221,500 প্রতিবছর।আর যদি আপনি এম.বি.এ. করতে চান তাহলে খরচ হবে প্রায় 1,932,900 – 6,443,000 প্রতিবছর।ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, 2023 সালে 5,046 বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জার্মানিতে পড়াশোনা করতে গিয়েছিল।এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার পরে জার্মানিকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য 6তম জনপ্রিয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।
ডেনমার্ক
পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীরা এমন একটি দেশকে বাছাই করতে চায় যেখানে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ একটি দেশ হবে।ডেনমার্ক একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হওয়ার পাশাপাশিএকটি উন্মুক্ত, অত্যাধুনিক গবেষণা ব্যবস্থা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী অর্থনীতির শীর্ষে রয়েছে। ডেনমার্কে বিবিএ বা এমবিএ করার খরচ নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়, প্রোগ্রাম এবং বা আন্তর্জাতিক ছাত্র কিনা বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।।যদি আপনি বি.বি.এ করতে চান তাহলে আপনার খরচ হবে আনুমানিক2,061,760 –3,221,500 প্রতিবছর।আর যদি আপনি এম.বি.এ. করতে চান তাহলে খরচ হবে প্রায় 2,577,200 – 3,865,800 প্রতিবছর।ডেনমার্কে MBA,BBA করার প্রকৃত খরচ আপনার ব্যক্তিগত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
উপসংহার
উচ্চশিক্ষার জন্য সঠিক দেশের নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্রদের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। জাপান,ডেনমার্ক,দক্ষিণ কোরিয়া,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং জার্মানি—এই দেশগুলো শিক্ষার মান, ক্যাম্পাস জীবন, এবং স্কলারশিপের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। UNESCO এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক ছাত্রের সংখ্যা ২০২০ সালে ৫ মিলিয়নেরও বেশি, যা ২০২২ সালে ৬.৫ মিলিয়নে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশের ছাত্রদের উচিত তাদের প্রয়োজন, বাজেট এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। দেশগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ভবিষ্যতের সুযোগের ওপর ভিত্তি করে
উচ্চ শিক্ষার জন্য কোন দেশ আপনার জন্য ভালো হবে আরো বিস্তারিত ভাবে জানতে হলে মেইজিএডুকেশন এর সাথে যোগাযোগ করুন । উচ্চশিক্ষার জন্য দেশ নির্বাচন করা গেলে, শিক্ষার্থীরা সাফল্যের সোপানে আরো একধাপ এগিয়ে যাবে